দেশে একজন হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসে (এইচএমপিভি) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। জানা গেছে, আক্রান্ত ব্যক্তি একজন নারী, যার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকায়। রবিবার (১২ জানুয়ারি) সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ নওশের আলম।
তিনি বলেন, “একজন ব্যক্তির শরীরে এইচএমপিভি ভাইরাসের পাশাপাশি আরও একটি ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।”
এইচএমপিভি একটি শ্বাসতন্ত্রবাহিত ভাইরাস, যার বৈশিষ্ট্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ও করোনাভাইরাসের মতো। ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে এই ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয়, তবে ধারণা করা হয় এটি তার আগেও বিশ্বজুড়ে ছিল। বাংলাদেশে ২০০১ সাল থেকে এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
এই ভাইরাস মূলত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি লেগে থাকা কাপড়, বস্তু বা জায়গায় স্পর্শ করার পর সেই হাত নাক-মুখে লাগালে সংক্রমণ ঘটতে পারে। সংক্রমিত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকাও ঝুঁকিপূর্ণ।
এইচএমপিভিতে আক্রান্ত হলে সাধারণত জ্বর, হাঁচি-কাশি এবং কখনো কখনো গলা ব্যথা দেখা যায়। লক্ষণগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই।
শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, কিডনি সমস্যা বা অ্যাজমায় আক্রান্তরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও বিশেষ সতর্কতার আওতায় থাকবেন।
এইচএমপিভির জন্য সরাসরি কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসাই এ রোগের মূল পদ্ধতি। জ্বর বা অন্য উপসর্গ গুরুতর না হলে ভাইরাসটি সাধারণত নিজে নিজেই সেরে যায়। তবে রোগ জটিলতায় পরিণত হওয়ার আগেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রতিরোধে করণীয়
১. নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া।
২. হাঁচি-কাশির সময় রুমাল, টিস্যু বা কনুই দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা।
৩. সংক্রমিত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকা।
৪. সংক্রমিত ব্যক্তি ও তার আশপাশের সবাইকে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা।
জ্বর হলে রোগীকে বিশ্রামে থাকতে হবে। সাধারণত ৩ দিনের মধ্যে জ্বর সেরে যায়। তবে তা না হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এইচএমপিভি এখনো মহামারি আকার ধারণ করেনি। তবে ভাইরাসটি কতটা শক্তিশালী হতে পারে, তা নির্ভর করছে এর বিস্তারের ওপর। তাই সচেতনতা ও সাবধানতা অবলম্বন করাই এ মুহূর্তে সর্বোত্তম পথ।